চোখের সামনে অদৃশ্য কোন শক্তি নিজের স্ত্রীকে ধর্ষণ করছে আর অত্যাচার করছে আমি কিছুই করতে পারছি না। আমি শুধু দেখছি তাসনিমের অত্যাচারিত হওয়া মুখটা কিভাবে কাকুতি-মিনতি করছে নিজেকে বাঁচানোর জন্য এই কষ্ট হয়তো একটুও সহ্য করতে পারছে না। প্রায় একঘন্টা পরে তাসনিম হু হু করে কেঁদে উঠলো। আমি নিজেই প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাসনিমকে কিভাবে বাঁচাবো সেটার কোনো উপায় আমার মাথায় আসছিল না। তাসনিম আমার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে জানোয়ার কোথাকার এতটা খারাপ আপনি আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি আপনি আমাকে এভাবে অত্যাচার কেন করছেন? তাসনিমের গলায় নখের আচড় এর দাগের রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তাসনিমের ফর্সা হাত দুইটাতে পাঁচটা আঙুল এর দাগ প্রায় কালো হয়ে গেছে রক্ত জমে। আমি অসহায়ের মতো তাসনিম এর দিকে তাকিয়ে আছি আমি যে তাসনিম কে কি বলব নিজেই বুঝতে পারছি না। আর এই মাঝরাতে যদি প্রমাণ করতে চায় আমি না অন্য কেউ তোমার সাথে এমন করেছে তাহলেও ভয় পেয়ে যাবে বা আমাকে বিশ্বাস করবে না কারণ ও যেহেতু সরাসরি আমাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছে। আমি তাসনিমকে বললাম ঠিক আছে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও আমার ভুল হয়ে গেছে এরকমটা আর কখনো হবে না প্লিজ।


আমি অসহায় ভাবে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলাম এবং তাসনিমকে ওষুধ লাগিয়ে দিলাম। ইস সকালে বাড়ির লোকজন কি ভাববে আমাকে নিয়ে বউয়ের শরীরে এরকম আঘাতের চিহ্ন দেখলে বাড়ির সবাই আমাকে জানোয়ার ভাববে সবার কাছে আমি কিভাবে মুখ দেখাবো। আমার কাছে মনে হল কোন খারাপ অদৃশ্য শক্তির নজর পড়েছে তাসনিম এর উপর পরেরদিন আমি আর অফিসে গেলাম না সারাদিন তাসনিমকে সময় দিলাম।


পরের দিন রাত হলো আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আজ রাতে আমি ঘুমাবোনা তাসনিমকে পাহারা দিব যাতে কোন খারাপ কিছু তাসনিমকে কিছু করতে না পারে। রাত তখন প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। হঠাৎ করে লোডশেডিং হলো।ঘর টা ঘন অন্ধকার হয়ে গেল। আমি দ্রুত মোমবাতি জ্বালাতে গেলাম। আমি মোমবাতি জ্বালানোর আগে কেউ একজন মোমবাতি জ্বালিয়ে আমার মুখের সামনে ধরে ফু দিয়ে নিভিয়ে দিল। মনে করেছি হয়তো তাসনিম। এরপর সে মোমবাতি টা আবার জালালো। অন্ধকার ঘর,, কোথাও কোনো সাউন্ড নেই বাইরে শুধু ঝিঁ ঝি পোকার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।বাইরে টাও ঘন কালো অন্ধকার।মোমবাতি হাতে নিয়ে কেউ ধীর পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। মোমবাতির আলোটা তার সামনে ধরা তাই পিছন থেকে আমি বুঝতে পারছি না যে কে? আমি তার পিছন পিছন হাঁটা দিলাম।মোমবাতি হাতে নিয়ে হেটে দোতলা থেকে নিচ তলায় নামল বাড়ির সবাই তখন ঘুমিয়ে পড়েছে। আমিও আস্তে আস্তে পিছন পিছন যাচ্ছি যে কে এটা? অন্ধকারে মোটেও বোঝা যাচ্ছে না যে কি আর এত রাতে বাড়ির কেউ যদি হবে বাড়ির বাইরে যাবে কেনো এতো রাতে। এটা যদি তাসনিম হবে বাড়ির বাইরে কেন যাচ্ছে? সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আলো টা হাতে নিয়ে আমাদের বাড়ির গেট থেকে বের হলো।রাস্তার রোড লাইটের আলো তে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে লম্বা একটা কেউ কিন্তু কালো,,পুরুষ না মহিলা এসব কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।আমিও কৌতুহলি হয়ে ওর পিছনে পিছনে যাচ্ছি। আমি অবাক হয়ে গেলাম আলোটা হাতে নিয়ে এমন একয়া জায়গায় গেলো,,জায়গাটা আমাদের শহরের নামকরা গোরস্থান। গোরস্থান টা মেইন রোডের সাইডে একটা গলির মতো রাস্তায় সেই রাস্তা দিয়ে এগিয়ে গিয়ে অনেক বড় একটা বাগান সেখানে জঙ্গলের মতো সেখানেই এই গোরস্হান টা। গোরস্থানের ভিতরে আলো নিয়ে ঢুকলো লোকটা সাথে সাথে আলোটা নিভে গেলো।


আর পিছন থেকে কেউ বলে ওঠে আর যাস না। গেলে আর প্রানে ফিরতে পারবি না।কি ভয়ংকর এক কন্ঠে বলে উঠলো। ভয় পেয়ে আমার পরান আঁতকে উঠে আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি লাঠিহাতে কুঁজো একজন কেউ দাঁড়িয়ে আছে।বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে। ঘন অন্ধকারে এই বাগানের মাঝে তাকে চেনাই যাচ্ছে না এরপর আমাকে বলে উঠলো ভয় পাস না আমি দাদি তাসনিমের দাদি তোকে আসতে দেখে আমি তোর পিছন পিছন এসেছি। দাদির আওয়াজ পেয়ে মনে হলো প্রাণ ফিরে পেলাম।আর একটু হলেই প্রাণ টা বেরিয়ে যেতো আমার। আমি দাদির সাথে বাড়িতে এলাম প্রচন্ড রকম ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ভাগ্যিস দাদি ছিল। বাড়ি এসে দেখি কারেন্ট এসেছে।


দাদি বললো যা তুই রুমে যা ভাই তোর বউ একা আছে।আমি রুমে গিয়ে দেখি তাসনিম এর পাশে দাদি সুয়ে আছে।আমি তো অবাক হয়ে গেলাম দাদি এখানে কিভাবে এলো।আমাকে দেখেই দাদী বলে উঠলো এত রাতে কোথায় গেছিলে আমি ওয়াশ রুমে এসছিলাম দেখলাম তাসনিম একা সুয়ে আছে তাই আমি ওর পাশে সুয়ে ছিলাম।তাসনিম ঘুমিয়ে আছে তাই আর ওকে ডাকলাম না।আমি আবার ও ভয় পেয়ে গেলাম।দাদি যদি তাসনিমের সাথেই থাকে তাহলে আমি কার সাথে এলাম।


এর ই মাঝে আমার মায়ের ডাক এলো তামিম বাবা তাসনিম কে নিয়ে এদিকে আয় তো।আমি তাসনিম কে না ডেকে নিজেই গেলাম গিয়ে দেখি তাসনিমের দাদী অসুস্থ। মা আমাকে বললো তোদের আর ডাকি নি উনার শরীর টা খারাপ।দুই ঘন্টা ধরে মাথায় পানি দিচ্ছি।আমি অবাক হয়ে গেলাম।এটা কি হচ্ছে।দাদী যদি এখানেই থাকবে তাহলে তাসনিমের সাথেই বা কে ছিলো আর আমার সাথেই বা কে ছিলো।


আমি ভয় পেলেও নিজেকে সামলে নিলাম।যেভাবে হোক সমস্যার সমাধান করতে হবে।কিন্তু কি উপায়ে করবো।আমার কারো সাহায্য নিতে হবে।


রাত তখন তিনটা বাজে আমি সুয়ে আছি কিন্তু ঘুম আসছে না চিন্তায়।হটাত দেখি তাসনিম পা কচলাচ্ছে আর চিৎকার করছে।আপনি কি আমাকে মেরে ফেলতে বিয়ে করেছেন।তখন কারেন্ট চলে গেলে আমার গায়ে ও হাত তুলেছেন।প্রচন্ড মেরেছেন আমাকে।আমার সাথে জোর জবর দস্তী করেছে মিলিত হয়েছেন।এখন আবার।তসনিমের কষ্ট দেখে আমি সহ্য করতে পারলাম ন।তসনিমের গায়ে হত দিতেই মনে হলো বরফে হত দিয়েছি এত ঠান্ডা হয়ে গেছে।আর আমাকে কেউ একজন ধাক্ক দিলো।এত জোরে ধাক্ক দিলো দরজার লক খুলে বারন্দায় গিয়ে পড়লাম।দরজা অটো লক হয়ে গেলো।ভয়ে আমার শরীর হীম হয়ে গেলো।ভিতর থেকে শুধু আওয়াজ আসছে তসনিমের চিৎকারের।


বেশ অনেক টাইম পর দরজা টা নিজে থেকেই খুলে গেলো ভিতর থেকে।ভিতরে গিয়ে দেখি অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় তাসনিম।প্রচন্ড কাঁদছে সে।


এবার আমি কিভাবে ক্ষমা চাইবো বুঝতে পারছি না।বার বার এমন হলে তো ক্ষমা চাওয়া সম্ভব না।আমি সিদ্ধান্ত নিলাম তাসনিম কে সব টা খুলে বলবো।


আমি কিছু বলার আগেই তাসনিম আমাকে বললো দেখুন আপনি কি সেই রাগ আমার সাথে এমন করছেন।আমি বললাম কিসের রাগে।তাসনিম বললো আমার মনে হচ্ছে গতকালের ব্যাপার টা আপনি জেনে গেছেন।আমি আপনার কাছে লুকাতে চাই নি।কিন্তু ভয়ে লুকাইছি।আমি আপনার কাছে আসার আগেও একবার শারিরিক নির্যাতন এর স্বীকার হয়েছি।


আমি বললাম কিভাবে।


তাসনিম না বললো তা শুনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।


চলবে,,,,