---হায় আল্লাহ,বাবু এতো উপরে উঠে গেলো কিকরে?কেউ ওকে নামানোর ব্যবস্থা করো।
---কথা বলো না তো এতো,আমাকে সাবধানে কাজ করতে দাও।
অতঃপর রোদ আদিলকে সিলিং ফ্যানের ওপর থেকে নামিয়ে আনলো।বারিষ দৌড়ে গিয়ে নিজের সন্তানকে কোলে নেয়।এরপর কান্না জুড়ে দিলো।
---আচ্ছা ভাই এতোটুকু একটা বাচ্চা সিলিং ফ্যানের ওপরে উঠলো কিকরে?
মানালীর হাসবেন্ড তওয়াফ রোদকে প্রশ্ন করে।
---আলেম সাহেব কি বলেছিলেন ভুলে গিয়েছেন বুঝি,আমাদের ছেলের সাথে অশুভ কিছু আছে।আর সেই এসব করছে হয়তো।
---আপনার কি মনে হয় জ্বীন ভুত বা আত্মা বলতে কিছু হয়?
---আগে আমি কোনোটাই বিশ্বাস করতাম না,কিন্তু এখন যা ঘটছে বিশ্বাস না করে কি উপায় আছে বলুন।
---আমি কখনোই আত্মায় বিশ্বাসী নই,তবে জ্বীন বলে কিছু থাকলেও থাকতে পারে,যদিও কোনোটাই নিজেদের চোখে দেখি নি।
---দেখুন আমাদের বিশ্বাস অবিশ্বাসের কোনো মূল্য নেই এখানে,তবে এটা ঠিক খুব খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে আমাদের সাথে।আমি জানি না,এর থেকে পরিত্রান পাবার উপায় কি,আলেম সাহেবের তাবিজ কোনো কাজেই আসলো না!
---আহা!তোমরা দুজন একটু চুপ করবে!আমার কিছু ভালো লাগছে না শুনতে।প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দাও,জ্বীন ভুত নিয়ে গবষেণা বাইরে গিয়ে করো।
বারিষের কথা শুনে ওর বোন মানালী আর তাওয়াফ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।ওরা গিয়ে নিজেদের রুমে শুয়ে পড়ে।এদিকে বারিষ আর রোদও আদিলকে নিয়ে শুয়ে পড়লো।
-
-
-
-
-
গভীর রাতে গোঙানীর অস্বাভাবিক আওয়াজে বারিষের ঘুম ভাঙ্গে।সে বুঝতে পারে শব্দটা তার বিছানার ওপাশ থেকেই আসছে।বারিষ ভয়ে ভয়ে লাইটের সুইচটা অন করলো।এরপর যে দৃশ্য দেখতে পায় রিতীমত ঘাবড়ে গেলো সে।
রোদ হাত পা অদ্ভুতভাবে বাঁকা করে শুয়ে আছে,আর চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে বারিষের দিকে।বারিষ ভয়ার্ত কন্ঠে রোদকে উদ্দেশ্য করে বলে।
---একি রোদ,কি হয়েছে তোমার,তুমি এমন করছো কেনো?
বারিষের কথা শুনে রোদ দাঁত কটমট করতে লাগলো।যেনো বারিষকে খেয়ে ফেলবে এমন উপক্রম।
---কি ব্যপার,তোমার হয়েছেটা কি,কন্ট্রোল করো নিজেকে...
রোদ এক লাফে বারিষের গায়ের ওপরে উঠলো।তারপর ওর গলাটা নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে।খাটের পাশেই দোলনায় আদিল ঘুমাচ্ছে।আদিলকে রাতে বিছানায় রাখে না ওরা,কারণ রোদের ঘুমের ঘোরে নড়ানড়া করার স্বভাব,একবার পুরোপুরি আদিলের গায়ের ওপরেই উঠতে বসেছিলো।বারিষের ঘুম ভাঙাতে সেই যাত্রায় রক্ষা পায়।আদিল রোদের গলা টিপে ধরে বলতে লাগলো।
---ছাড়বো না তোকে,ছাড়বো না কিছুতেই...
---রোদ,ছাড়ো বলছি।আমার কিন্তু খুব লাগছে।
---খুব লাগছে তাই না,আমারও লেগেছিলো তবে গায়ে নয়,বুকে।যখন তুই আমার সাথে বেঈমানী করিছিলি আমারও লেগেছিলো,সেই ক্ষত আজও শুকোয়নি।
---কি বলছো এসব,আমি তোমার সাথে কবে কি বেঈমানী করলাম,আমি কিচ্ছু করিনি।ছাড়ো বলছি।
---এখন অস্বীকার করলে তো চলবে না....আমি কিছু ভুলি নি,
---কি ভুলো নি তুমি,শুনি...
---তোর আর আমার কলেজ লাইফের কথা কিচ্ছু ভুলিনি আমি।
---কলেজ লাইফ,তোমার আর আমার।তোমার মাঝরাতে হলো টা কি বলবে,ছাড়ো বলছি আমায়,তোমার অসভ্যতার জন্য বাবুর ঘুম ভেঙ্গে যাবে!
---আমি অসভ্যতা করছি না,অসভ্যতা তো করেছিস তুই,ছাড়বো না তোকে!
---আমি কিন্তু চিৎকার দেবো ছাড়ো বলছি,
---কর চিৎকার আজ তোকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না,তোকে মে রে তোর আদিলকে শে ষ করবো।
---পাগল হয়ে গেছো নাকি,আদিল তোমারও ছেলে....বাবা হয়ে ছেলেকে নিয়ে এমন কথা বলতে বাঁধছে না তোমার?
---কে ছেলে,কেউ আমার ছেলে না।তুই তো আমার সন্তানের মা হবার কথা দিয়েছিলি আমায়,কিন্তু হস নি,ঠকিয়েছিস আমায়।
রোদের মুখের কথা এবার বারিষকে অনেক বেশী অবাক করে দিলো।ও বুঝতে পারছে নিশ্চয়ই কোনো একটা গন্ডগোল হচ্ছে।
---কে তুমি সত্যি করে বলো,তুমি রোদ নও,তাই তো?
---এখনো চিনতে পারিস নি আমায়,
---না পারিনি...
---আমি পারাবত!
পারাবত নামটা শুনে বারিষের যেনো জ্ঞান হারানোর উপক্রম হলো।নিজের কানকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না ও।
----কি বললে তুমি পারাবত....,
---হ্যাঁ,
---এটা হতে পারে না কিছুতেই,কিছুতেই না।পারাবত মরে গেছে,মৃত মানুষ কখনো ফিরে আসতে পারে না।
--কিন্তু আমি তো এসেছি।দেখ আমায়..
সত্যিই তো,রোদের পক্ষে পারাবতের কথা জানা কিছুতেই সম্ভব নয়।রোদ যে কথাগুলো বলছে এগুলো একমাত্র পারাবতের পক্ষেই জানা সম্ভব।তবে কি এটা সত্যিই পারাবতের আত্মা,কিন্তু ও এতো বছর পরে ফিরে আসলো কেনো?কী চায় ও?
---তুমি আমার স্বামীর শরীরে কেনো ঢুকেছো,ছেড়ে দাও ওকে...
--কেনো রে,খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি নিজের স্বামীর জন্য।
---পারাবত তুমি রোদকে ছেড়ে দাও।আর দয়া করে আমার থেকে অনেক দূরে চলে যাও।তোমার উপস্থিতি ভালো লাগছে না আমার।
---ছাড়বো না আমি,তোকে তোর স্বামী সন্তান কাউকে ছাড়বো না।তুই আমার সাথে যা করেছিস সবকিছুর শোধ তুলবো এবার,
---আমি কিচ্ছু করি নি তোমার সাথে,চলে যাও.....
আচ্ছা একটা কথা....আমার ছেলের সাথে তুমি কিছু করোনি তো,তার মানে কি আলেম সাহেবের বলা সেই অশুভ শক্তিটা তুমি?না এটা হতে পারে না।পারাবত কি চাইছো তুমি বলো তো,আমার ছেলে কি ক্ষতি করেছে তোমার।তুমি ওকে কেনো টেনে আনছো আমাদের ভেতরে?আমার ছেলের কোনো ক্ষতি হলে কিন্তু আমি ছেড়ে দেবো না তোমায়,
---তুই আমার কিচ্ছু করতে পারবি না,এবার করবো তো আমি....
একটু পরেই ফজরের আজানের ধ্বনি ভেসে আসলো।রোদ আবার স্বাভাবিক হতে থাকে।হয়তো পারাবতের আত্মা ছেড়ে দিয়েছে ওকে।আযানের শব্দের সাথে এবার আদিলও আর কাঁদলো না।এই ব্যপারটা একটু হলেও বারিষকে স্বস্তি দেয়।রোদকে আবারো ওর জায়গায় শুইয়ে দিলো,তারপর ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।রোদ ক্ষীণ কন্ঠে বারিষকে প্রশ্ন করে।
---কি হয়েছিলো আমার?আমি তোমার ওপাশে গেলাম কিকরে?
---ঘুমাও এখন,কিছু হয়নি।জানো তো ঘুমের ঘোরে তোমার নড়াচড়া করার অভ্যাস।
---আমার কেনো জানি না মনে হচ্ছে তুমি মিথ্যে বলছো আমায়।সত্যি করে বলো কি হয়েছিলো।
--বললাম তো কিছু না।চুপ করো।
---তুমি আমার সাথে মিথ্যে বলা শিখেছো কবে থেকে বারিষ...
বারিষ রোদের ঠোঁটের ওপর আঙ্গুলটা রাখলো।
---বলেছি না,একটাও কথা নয়।চুপ থাকো।
বারিষ আর কিছু না বলে ঘুমিয়ে পড়ার ভান করে রইলো।নিরুপায় হয়ে রোদও ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়ে!পারাবতের কথা মাথা থেকে কিছুতেই সরাতে পারছে না বারিষ।কলেজ লাইফের ফেলে আসা সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়তে লাগলো ওর!
চলবে.......
0 Comments