-: মিরা।
রিয়া ফোন দিয়েছিলো। ওর কিছু টাকা লাগবে কি যেন দরকার। আমি পাঠিয়ে দিবো বলেছি। এজন্য না যে ও আমার প্রাক্তন স্ত্রী। বরং এর জন্য যে ও আমার মেয়ের মা ছিলো একসময়ে।
এটা বলেই ও চলে গেলো। আমার ওর কথা শুনার পর কেন জানি মন মোচড় দিয়ে উঠলো। এক নতুন অনুভতি জাগ্রত হলো মনে। বন্ধুত্ব ভালোবাসার আরেক নাম। শুধু কেউ কষ্টের সময় ভালোবেসে হাত ধরলে সব কষ্ট ধুয়েমুছে যায়।
কাব্যর কথা শুনে আমার মন মোচড় দিয়ে উঠলো।
কাব্য এত ভালো যে তার মৃত মেয়ের মায়ের জন্য এত করছে। কাব্যর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়তো কখনো তার প্রথম স্ত্রীকে সাহায্য করত না। করবেই বা কেন??
পুরুষজাতি তো যে তাকে ছেড়ে গেছে তার জন্য এত কিছু করবে তাদের একটা তথাকথিত নিজের অহংকার আছে না। কিন্তু আজ আমার যেন কাব্যর জন্য সম্মান
বেড়ে গেলো। কাব্য ৫ দিন পর রিয়ার বাসায় যাবে বললো। আর তখন আমি যেন একাকিত্ব বোধ না করি তার জন্য কাব্য তার ছোট বোন সুরভীকে আমার কাছে দিয়ে গেলো।
সুরভি ক্লাস নাইনে পড়ে। অনেক মিষ্টি মেয়ে। কাব্য যাওয়ার সময় শুনেছি কাব্য সুরভিকে বলছে।
--সুরভি, তুই কিন্তু তোর ভাবিকে ১ মিনিটের জন্যেও চোখের আড়াল করবি না। কোন কটু কথা বলবি না
ইরার মত। আর আমি রান্না করে দিয়েগেছি,
আর লক্ষি বোন আমার তোর ভাবী একটু অসুস্থ তাই পারলে খাইয়ে দিস। (কাব্য)
---জ্বী ভাইয়া, তুমি কোন টেনশন করো না।
এদিকে আমি রুমের ভিতর বসে শুনছি। আমি কাব্যর কাছে গিয়ে ওকে যে বলবো যে সাবধানে যেয়েও সেই ইচ্ছা থাকা সত্তেও। আমি বসে আছি। তারপর কাব্য যাওয়ার সময় আমার কাছে বলে গেলো।
--মিরা।
আমি রিয়ার বাসায় যাচ্ছি। ওদের বাসা একটু দূরে এজন্য আসতে যেতে দুইদিন লাগবে। এ দুই দিন সুরভি আর তুমি সাবধানে থেকো।
আমি তখন ওর দিকে না তাকিয়েই বললাম।
---হ্যাঁ। সাবধানে যেও।
কাব্য তখন আমার কথা শুনে একটু মুচকি হাসি দিয়ে বের হয়ে গেলো।
তারপর আমি আর সুরভি বাসায় একা। সুরভী খুব ভালো মেয়ে। আমি ওর সাথে গল্প করতে করতে যে কখন সময় কেটে যেতো বলাই যায় না। কিন্তু
এমনটা নয় যে আমার কাব্যর কথা মনে পড়ে না।
হ্যাঁ অবশ্যই মনে পড়ে। তো সুরভি একদিন কাব্যর ওই ডায়রিটা পড়ছিলো যেটা কাব্য রোজ রাত্রে লিখে।
তারপর দেখলাম সুরভি ৫ সেকেন্ড পর পর শুধু ডায়েরির পাতা উল্টাচ্ছে। এটা দেখে আমি একটু হাসছিলাম কিন্তু ওর সামনে না। যদি আবার মন খারাপ করে। কিন্তু মনে হয় সুরভি ডায়েরি টায়েরি পড়তে ভালোবাসে না তাই এইভাবে শুধু পাতা উল্টাচ্ছে। আমি তখন ওইখান থেকে রান্নাঘরে চলে গেলাম। তার কিছুক্ষন পর দেখি সুরভি আমার কাছে আসলো। আর বললো।
---ভাবী, একটা কথা বললে রাখবে।
---কি কথা?? দেখি রাখা যায় কি না
---না, আগে বলো রাখবে।
---আচ্ছা রাখবো বলো।
---এই যে ভাইয়ার ডায়েরীটা তুমি যখন সময় পাবে তখন একটু কষ্ট করে পড়বে।
---আচ্ছা সময় পেল পড়বো।
তারপর সুরভি আবার বললো।
---যতক্ষন না পড়বে ততক্ষন কিন্তু ভাইয়াকে দিবে না।
---আচ্ছা দিবো না।
তারপর আমি ডায়েরিটা নিয়ে ড্র্রয়ারে রেখে দিলাম।আমার সত্যি বলতে ডায়েরী পড়ার কোন ইচ্ছা নেই।
পরদিন কাব্য বাসায় আসলো। বাসায় এসেই চিৎকার দিয়েই বললো।
--এক গ্লাস পানি দাও তো।
আমি এক গ্লাস পানি নিয়ে ওর কাছে গেলাম। আর তখন কাব্য বললো।
--তুমি কেন আনলে? সুরভিকে বলতে তুমি তো অসুস্থ।
কাব্যর কথা শুনে আমার একটু রাগ ই হলো। তখন সাথে সাথে আমিও বললাম।
---আমি মারা যাবো না একটু কাজ করলে।
বলেই চলে আসলাম।
তারপর সুরভিও পরদিন চলে গেলো। আমার ইচ্ছা করছিলো ওকে রেখে দিতে। কিন্তু কাব্যকে বলতে কেমন যেন লাগছে। কারন ওর বোন যদি ও না রাখে তাহলে আমার কি।
সুরভী যাওয়ার পর বাসায় কেমন জানি হাহাকার ছেয়ে গেলো। রাত্রে রায়হানের কথা মনে পড়ছিলো খুব। তাই লকেট টা বের করে কান্না করছিলাম। কাব্য তখন বাসায় ছিলো না।
রায়হানের দুইদিন পর মৃত্যুবার্ষিকী। দুইবছর ধরে। আমি খিচুড়ি রান্না করে মাদ্রসায় দিতাম। তখন তো রায়হানের বিধবা ছিলাম তাই দিতাম। কিন্তু এইবছর আমি কাব্যর স্ত্রী কিভাবে দিবো? এইসব ভেবেই কান্না করছিলাম। কিন্তু কাব্য কখন যেন পিছন থেকে এসে কাশি দিলো। আমি জলদি লকেট টা লুকাতে গিয়ে লকেট টা ছিড়ে পড়ে গেলো কাব্যর সামনে। আমার এতটুকু সাহস ছিলো না যে উঠে লকেট টা নিবো।
তারপর কাব্য লকেট উঠিয়ে নিয়ে চলে গেলো। আমার বাধা দেওয়ার যেন কোন ক্ষমতা ছিলো না। কি বলে বাধা দিতাম?
বলতাম আমার ১ম স্বামী আমাকে এটা বাসররাতে দিয়েছে। আর আমার ২য় স্বামীর কাছে কি এটা বলতাম।
কাব্য চলে যাওয়ার পর আমি চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম
.
.
চলবে..................
0 Comments