-: বলতাম আমার ১ম স্বামী আমাকে এটা বাসররাতে দিয়েছে। আর আমার ২য় স্বামীর কাছে কি এটা বলতাম।
কাব্য চলে যাওয়ার পর আমি চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। আমি চিৎকার করে কান্না করছি কিন্তু পুরা বাড়ি ফাকা তাও আজ কাব্য ছুটে আসলো না। হয়তো কাব্য বাসায় নেই। তারপর কান্না করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি তা নিজেও জানি না। তখন হঠাৎ আলমারির শব্দে আমার ঘুম ভাঙলো। আমি চোখ মেলে দেখলাম কাব্য কিছু একটা খুঁজছে। গায়ের জামা দেখে মনে হলো এখন এসেছে। আমার আর ওর দিকে নজর নেই। শুধু নজর ওর হাতের দিকে। আমার লকেট টা কোথায় চোখ দিয়ে তাই খুঁজছিলাম। কিন্তু মুখে বলার সাহস নেই যে আমি বলবো, কাব্য আমার লকেট টা দাও।
কাব্য হঠাৎ তখন আমার দিকে তাকালো। আর আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। কোন মুখে ওর দিকে তাকাতাম আমি। তারপর কাব্য আবার লাইট অফ করে বাহিরে চলে গেলো। আমার একটু অবাক লাগছিলো কারন আজ কাব্য আমাকে খাইয়ে দেয় নি। আর কাব্যর মনটাও কেমন জানি খারাপ লাগছিলো। এইসব ভাবতে ভাবতে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে কাব্য ডাক দিলো।
--মিরা ঘুম থেকে উঠো প্লিজ।
আমি জলদি করে উঠে বসলাম তারপর ফ্রেশ হয়ে নামায পড়লাম। তখন কাব্য বললো।
--মিরা, চাল,মাংস সব এনেছি। এখন যাও রান্না করো।
আমি একটু বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
---কি রান্না করবো??
--ওমা তুমি ভুলে গেছো আজ রায়হানের মৃত্যুবার্ষিকী। তুমি না রোজ মাদ্রাসার বাচ্চাদের খিচুড়ি রান্না করে দাও। তার জন্য ই তো এনেছি। জলদি রান্না করো ১২টায় দিয়ে আসবো।
আমি ওর কথা শুনে যেন মুর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কি বলবো কি করবো সব যেন বোধ হারিয়ে গেলো ওর কথা শোনার পর। কাব্য তখন আমার হাত ধরে আমাকে রান্নাঘরে নিয়ে গেলো। তারপর আমি জলদি রান্না করা শুরু করলাম। অবশ্য কাব্য আমাকে অনেক সাহায্য করছে।
অবশেষে রান্না শেষ হলো কাব্য খাবার নিয়ে মাদ্রাসায় গেলো। আর আমি পিছন থেকে ওকে দেখতে লাগলাম তখন অন্য রকম একটা অনুভুতি যেন কাজ করছিলো আমার মধ্যে।
রায়হানের জন্য এমনকি মসজিদে মিলাত ও দিলো কাব্য এবং সেই মিষ্টি কাব্য নিজে রায়হানদের বাসায় নিয়ে গেলো। আজ রায়হানের মৃত্যুবার্ষিকী অথচ আজ রায়হানের জন্য আমার চোখের পানি পড়ে নি। বরং কাব্যর এত ভালো মানুষিকতার জন্য কেঁদেছি।
রাত্রে কাব্য আমাকে আবার খাইয়ে দিলো কিন্তু আজকে ওর খাইয়ে দেওয়াতে যেন আমিই সবচেয়ে বেশী খুশি হলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে যখন রুমে গেলাম তখন কাব্য বললো।
--হাতটা দাও তো মিরা?
---কেন?
--প্লিজ দাও
আমি হাতটা বাড়ালাম। তখন কাব্য আমাকে আমার লকেট টা ঠিক করে এনে দিলো। কাব্য আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
--জানো এটা কাল ঠিক করার জন্য আমি তোমাকে গতকাল খাইয়ে দিতে পারি নি। স্যরি।
এ মুহুর্তে আমি কাব্যকে কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। ইচ্ছা করছিলো ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে। কিন্তু মনে সাহস ছিলো না। আমি লকেট টা খুলে দেখিও নি। একটু করে কাব্যর দিকে তাকিয়ে শুয়ে পড়লাম। আজ চোখে পানিও নেই। চোখের পানি বন্ধ হওয়ার যেন একটা কারন পেয়ে গেছিলাম।
পরেরদিন সকালে কাব্যকে বললাম।
---কাব্য, সুরভীকে আমাদের কাছে আনবে। আমাদের এখান থেকেই লেখাপড়া করুক।
আমার কথা শুনে কাব্য যেন খুশিতে পাগল হয়ে গেলো।
--হ্যাঁ নিশ্চয় আনবো। তুমি এই প্রথম আমার কাছে কিছু চেয়েছো। এছাড়া আগে সুরভী আমার আর রিয়ার সাথে থাকতো। কিন্তু রিয়া ওকে ভালোভাবে ট্রিট করতো না। তাই ইরার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর এখন তুমি যেহেতু বলছো আমি আগামীকাল গিয়ে নিয়ে আসবো।
আজ কাব্যর মুখে রিয়ার কথা শুনে কেন জানি আমার খুব খারাপ লাগলো।
এদিকে এই বলে কান্য সুরভীকে আনতে চলে গেলো। তখন আমার সুরভীর দেওয়া ডায়েরির কথা মনে পড়লো। ও এখন আসবে যদি জিজ্ঞেস করে কি বলবো???
তাই ড্রয়ার থেকে ডায়েরীটা বের করলাম। ডায়েরী টা খুলতেই প্রথম পেজে একটা ডেইট লেখা ছিলো। ডেইট টা কাব্য আর আমার বিয়ের।
পরের পেজ উল্টালাম দেখি লেখা দুইটি লাইন।
"ও আমার প্রথম ভালোবাসা ছিলো। আর আজ ওর সাথেই আমার বিয়ে হলো কি ভাগ্য"
এটা দেখে আমার যেন পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো।
আমি আবার পেজ উল্টালাম।
দেখি লেখা।
"ও আজ আমার সাথে কথা বলে নি। আমি ই কথা বলেছি"
আর আমি এইভাবে পেইজ উল্টাতে লাগলাম আর প্রতি পেইজে এক কথা ছিলো। এই দেড় মাসে যে আমি কখন কথা বলেছি আর কখন কথা বলি নি।
তারপর শুধু শেষের পেইজে লেখা ছিলো।
"আমি ওকে আবার ভালোবেসে ফেলেছি"
এখন আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। এটা ভালো লাগার পানি।
এদিকে কাব্য সুরভীকে নিয়ে আসলো। তারপর আমি কাব্যর সাথে যেন স্বাভাবিক হতে লাগলাম আসতে আসতে। কিন্তু আমি ওকে কি ভালোবাসি তা জানি না।এভাবে রায়হানের কথা মনে পড়তো মাঝে মাঝে কিন্তু এখন কান্না করি না।
আর এইভাবেই ৮মাস কেটে গেলো।
তো একদিন রান্নাঘরে আমি কাজ করছি তখন সুরভি এসে বললো।
---ভাবী,জলদি আসো। দেখো ভাইয়া কি এনেছে।
এসে আমার হাত টেনে নিয়ে গেলো দেখি বাইক। আমি সাথে সাথেই কাব্যকে চিৎকার দিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। আর ঐ প্রথমবার বললাম।
---প্লিজ কাব্য। রায়হান এই বাইকের জন্য এক্সিডেন্ট হয়েছে আমি কিছু করতে পারি নি। কিন্তু তোমাকে আমি হারাতে পারবো না। আমি তোমাকে ভালোবাসি।
সত্যি বলতে আমি নিজের অজান্তে ওকে ভালোবেসে ফেলেছি তা নিজেই ঐ দিন মুখ দিয়ে স্বীকার করেছি।
আর কান্য ও যে আমাকে ভালোবাসে তা ওই দিন বলেছে। তাও নিজেদের সময় দিয়ে।
এরপর আজ দেড়বছর পর আমরা আমাদের দাম্পত্য জীবন শুরু করি। কাব্য আমাকে বলেছিলো।
--এখন বুচি বলে ডাকি?
---না কাব্য। আমি মিরা নাম দিয়ে আমার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে চাই।
এরপর আজ ৫ বছর আমার নতুন জীবনের দ্বিতীয় স্ত্রী রুপে। আমার জমজ সন্তান হয়েছে তাদের বয়স ৬ মাস ১টি মেয়ে ১টি ছেলে। মেয়ের নাম আমি রেখেছি রাইসা আর ছেলের নাম কাব্য রেখেছে রায়হান।
আজ ওই লকেট ও আমি খুলে রেখেছি। কারন রায়হান ই আমার আর কাব্যর ফ্রেন্ডশিপ করেছিলো ওই হয়তো আমাকে আর কাব্যকে এক সুতায় বেধে রেখেছে। তাই আমার কাছে ২য় বিয়ে মানে পুনরায় হাসির জন্য একটি কারণ।
.
.
বিঃদ্রঃ গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক, এতদিন গল্পটা ধের্য্য সহকারে পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
.
সমাপ্ত............


0 Comments