-: আর তা দেখে আমি সাথে সাথেই হেসে উঠলাম। আজ অনেকদিন পর আমি হেসেছি। রায়হান মারা যাবার পর এই প্রথম আমার মুখ দিয়ে হাসি ফুটলো।

আসলে কাব্য এভাবে পড়ে যাওয়ায় আমি হাসছিলাম।আর হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে কান্না করে দিলাম। তখন আমার কান্না দেখে কাব্য উঠে আমার কাছে আসলো তারপর বললো।


--এই নে বুচি

(এক গ্লাস পানি আমার সামনে এগিয়ে দিয়ে)


---প্লিজ কাব্য আমাকে বুচি ডেকো না। আমার রায়হানের কথা মনে পড়ে যায়। (মিরা)


--হু আচ্ছা, ডাকবো না। মিরা বলে ডাকবো। প্লিজ এবার পানিটা নাও।


তখন আমি কাব্যর দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলাম। ওর কথা আর রায়হানের কথার সাথে বেশ মিল আছে। আর থাকবে ই তো ভার্সিটিতে ও আর রায়হান খুব ভালো ফ্রেন্ড ছিলো।


তারপর আমি পানিটা নিয়ে পান করলাম। সত্যি বলতে অনেক পানির পিপাসা পেয়েছিলো। পানিটা খেয়ে নেওয়ার পর গ্লাস টা নিয়ে গেলো কাব্য। ও যাবার পর মনটা কেমন জানি করছিলো। আমার সাথে এটা কি হলো। যাকে জীবন দিয়ে ভালোবেসেছি সে আমার জীবন নিয়েই চলে গেলো। আর যার চলে যাওয়ার পর অথাৎ কাব্য বিদেশে চলে যাওয়ার পর আমি আর রায়হান ওকে অনেক খুঁজেছিলাম। অবশ্য বেশী রায়হান খুঁজেছিলো। কিন্তু আজ তার দেখা মিলেছে ঠিক কিন্তু রায়হান নেই। আমি এসব ভাবছিলাম। 


এদিকে কিছুক্ষন পর দেখি কাব্য একটা প্লেটে ভাত নিয়ে এসেছে। তারপর আমাকে বললো।


--এই নাও ভাত খাও।


---না আমার ক্ষুধা লাগে নাই। তুমি খাও


তারপর দেখলাম কাব্য ভাত মাখছে। কি আর মনে হয় নিজেই খাবে। কিন্তু না, কাব্য ভাত মাখিয়ে আমার মুখের সামনে নিয়ে এসে বললো।


--মিরা হা করো প্লিজ। (কাব্য)


---না আমি খাবো না।(মিরা)


--আচ্ছা মিরা তোমার মনে আছে আমাদের ইংলিশ প্রফেসর এর নাম কি?(কাব্য)


---হুম মনে আছে। দিলারা মাহবুব।(মিরা)


কথাটা বলার মাঝে কখন যে কাব্যর কথার মাঝে আমি হা করে ভাতটা খেয়েছি মনে নেই। কাব্য ঠিক এভাবে আমাকে ওর কথার ছলে ভাত খাইয়ে দিলো। আর আমিও কখন যে ভাত খাওয়া শেষ টের ই পেলাম না।


--মিরা দেখেছো ভাত খাওয়া শেষ এখন হতে আমিই তোমাকে ভাত খাইয়ে দিবো। অনেক রোগা হয়ে গেছ।আগে কত সুন্দর গোলুমলু ছিলে আর এখন।(কাব্য)


এদিকে আমি কাব্যর এ রকম কথা শুনে আবার আমার চোখ ছলমল করে উঠলো। খুব ইচ্ছা করছিলো বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে একটু কান্না করি। কিন্তু ভয় করছিলো যদি অনুভূতির কারনে অন্য কিছু হয়ে যায়। কারন ও এখন আমার ২য় স্বামী। আমার এই দেহটার প্রতি ওর তো অধিকার আছে। তখন কাব্য আমার কান্নার চোখ দেখে বললো।


--প্লিজ মিরা কান্না করো না। তোমার চোখের পানি দেখলে আমার কষ্টে বুক ফেটে যায়। যাও ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো।


আমিও কাব্যর কথামত ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর সব গহনা খুললাম। কিন্তু লকেট টা দেখে আর কান্না থামাতে পারলাম। বেসিনের কল ছেড়ে জোড়ে কান্না করছিলাম। চিৎকার করে কান্না করতে লাগলাম। আর রায়হানের ছবিটা খুলে দেখছিলাম। রায়হানকে খুব বলতে ইচ্ছা করছে দেখো তোমার বেষ্ট ফ্রেন্ডকে পেয়েছি কিন্তু তোমার বুচি তার ২য় স্ত্রী।

তখন হঠাৎ কাব্য ওয়াসরুমের দরজা ধাক্কা দিলো। আর বললো।


--মিরা........

মিরা একটু বের হও প্লিজ।


কাব্যর আওয়াজ শুনে আমি জলদি লকেট টা লুকালাম। কারন মাকে কথা দিয়েছি মা বলেছিলো।


---মারে তোর বর্তমান স্বামীকে কখনো বুঝতে দিবি না যে তুই জামাইবাবাজীকে মিস করছিস।


তখন আমিও মাকে বলেছিলাম।


---রায়হানকে আমি কখনো ভুলতে পারবো না আর তুমি মিস করার কথা বলছো।


মা তখন আমার কথা শুনে কাঁদতো।

যাই হোক আমি মায়ের কথা রাখতে পারলাম না। কাব্যর সামনে আমি রায়হানের জন্য কেঁদেছি। তারপর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলাম। দেখি কাব্য বিছানা গুচাচ্ছে। এটা দেখে হঠাৎ আমার বুকে ব্যথা উঠলো। তাহলে এখন কি কাব্য আমাকে তার স্ত্রী বলে ঝাপিয়ে পড়বে? হয়তো পুরুষ ই ত....


তখন জান্য আমাকে দেখে একটু মুচকি হাসি দিলো আর বললো।


--মিরা তুমি খাটে ঘুমাও আমি সোফায় ঘুমাবো।


কথাটা শুনার পর আমি ওর দিকে একদৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম হয়ত বন্ধু বলে আমাকে দেখে একটু মায়া করলো। তারপর আমি গিয়ে বিছানায় বসলাম

ও সোফায় বসে ল্যাপটপ দিয়ে কাজ করছে। আমি ওর দিকে তাকিয়েছিলাম আর ভাবছিলাম বাবা তো বলেছিলো আমার স্বামী মানে কাব্য ডিভোর্সি।


কিন্তু আমি জানি কাব্য অনেক ভালো একটা ছেলে তাহলে কেন ওর ডিভোর্স হলো?? তখন মনে একটু সাহস করে ওকে জিজ্ঞেস করলাম।


---আচ্ছা কাব্য তুমি বিয়ে কবে করলে? আর ছাড়াছাড়ি কবে হলো??


আমার প্রশ্ন শুনে কাব্য কিছুক্ষণ চুপ ছিলো। প্রায় অনেক্ষন। মনে হয় আঘাত পেয়েছে আমার কথায়। তাই আমি আর কিছু বললাম না। আমার নিজের কষ্টের শেষ নেই আবার অন্যের কষ্ট কি ভাববো?? তাই শুয়ে পড়তে নিলাম তখনি কাব্য বলে উঠলো।


--ওর নাম রিয়া ছিলো।


কাব্যর কথা শুনে আমি সাথে সাথেই উঠে বসলাম। তারপর কাব্য আবার বলতে শুরু করলো।


--রিয়ার সাথে আমার বিয়ে বাবা মার মাধ্যমেই হয়েছিলো। এবং বিয়ের কিছুদিন পর আমরা বিদেশ চলে যাই। তার ১বছর পর আমার ১টা মেয়ে হয় ওর নাম রাইসা। কিন্তু রাইসার বয়স যখন ৫মাস রিয়া তখন নতুন করে কাউকে ভালোবাসে নতুন একজন ভালোবাসার মানুষ পেয়ে যায়। অবশ্য আমি পরকিয়া বলবো না এটাকে। রিয়াকে হয়তো আমি খুশী রাখতে পারি নি তাই সে নতুন ভালোবাসা পেয়েছে যে তাকে খুশী রাখবে। তারপর ও আমার কাছে ডিভোর্স চায়।এবং আমিও ওকে খুশি মনে ডিভোর্স দেই। কিন্তু খারাপ লাগতো আমার মেয়ের জন্য। আমি আমার মেয়ের সাথে দেখা করতে যেতাম মাঝে মাঝে। রিয়া এবং তার স্বামী আমাকে দেখা করতে দিত কিন্তু মিনিট খানেকের জন্য। তারপর থেকে নিজের মেয়ের সাথে মিনিট খানেক দেখা করতাম। এভাবে রাইসার বয়স যখন দুই বছর পূর্ণ হয়, তখন আমার রাইসা না'কি খুব অসুস্থ হয়ে যায়। অবশ্য আমি তখন বিদেশে। তারপর একদিন সকালে রিয়া আমাকে ফোন দিয়ে বললো আমার মেয়ে রাইসা নাকি আর দুনিয়াতে নেই। আসলে আমি কতটা দুর্ভাগা যে নিজের মেয়েকে শেষ দেখা পর্যন্ত দেখতে পারি নাই।


তারপর কাব্য একটু স্তব্ধ। 

এদিকে আমার কাব্যর কথা শুনে মনে হচ্ছিলো আমার কষ্ট ওর কষ্টের কাছে তুচ্ছ। কারন কাব্য যখন রাইসার কথা বলছিলো আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছিলো তখন আমি নির্বাক দর্শকের মত তা দেখছি আর ভাবছি কি করবো আমি?? 


কাব্যকে বন্ধুর মত সান্তনা দিবো নাকি স্ত্রীর মত?

তারপর একটা সময় কাব্য ওর চোখ মুছে লাইট ওফ করে দিয়ে বললো।


--মিরা ঘুমাও প্লিজ। আজ অনেক ধকল গেছে। আমি শুইয়ে পড়লাম।


কিন্তু আজ আমি যেন রায়হানের কথা না ভেবে কাব্যর কষ্টের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে কাব্য আমাকে ডাক দিলো। আমি ঘুমের ঘোরে স্পষ্ট শুনছি কাব্য বলছে।


--মিরা....মিরা ঘুম থেকে উঠো প্লিজ।


তারপর আমি ওর কথামত উঠলাম।


--নামায পড়বে না মিরা?


---না।

যার আজ কিছুই নেই সে আজ আল্লাহর কাছে কি চাইবে?


আমার কথা শুনে কাব্য কিছুক্ষণ চুপ ছিলো। তারপর বললো।


--রায়হানের আত্তার শান্তি।


কথাটা শুনার সাথে সাথেই আমি ওর মুখের দিকে চেয়েছিলাম। কারন আমার ২য় স্বামী আমার ১ম স্বামির আত্তার শান্তি চাচ্ছে?

কাব্যর মুখে আমার ১ম স্বামির শান্তি কামনা চাওয়া দেখে একটু অবাক হলাম। ব্যাপারটা আমার কাছে খুব হাস্যকর লাগছিলো। কারন ২য় স্বামি ১ম স্বামীর শান্তি কামনা করছে। পরে মনে পড়লো রায়হান কাব্যর বন্ধু তাই হয়তো।


কিন্তু রায়হানের শান্তির জন্য আমি সব করতে পারি তাই আমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়লাম।কুরআন শরিফ পড়লাম। রায়হান মারা যাওয়ার পর থেকে আমি এক ওয়াক্ত নামায ও পড়ি নি। কারন আল্লাহতালার উপর কেমন যেন একটা রাগ চলে এসেছিলো। শুধু মনে হত তিনি আমায় নিঃস্ব করেছেন।কিন্তু আজ কেন জানি কাব্যর কথায় আল্লাহর প্রতি আমি আবারো বিশ্বাস ফিরে পেলাম।


তারপর কাব্য মসজিদ থেকে ফিরে এসে দেখলো আমি কোরআন শরিফ পড়ছি। তাই রুমে ঢুকে কিছুক্ষণ পর আবার বের হয়ে গেলো। আমি কোরআন পড়া শেষ করে ঘড়িতে দেখলাম ৮টা বাজে। আমি জলদি তৈরি হলাম। যতই ২য় স্ত্রী হই নতুন বাড়ির বউ তো। তারপর

সবার জন্য নাস্তা বানাতে রান্নাঘর এ যাবার সময় দেখি ডাইনিং টেবিলের উপর সব খাবার সাজানো।

আমি ভাবলাম হয়তো আমার ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়েছে তাই খাবার রান্না করা আগেই হয়েছে। কিন্তু পরে দেখলাম কাব্য রুটির বাটি হাতে করে নিয়ে আসছে।


আমার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছিলো। কিন্তু কেন জানি এখন আর কান্যর সাথে কথা বলতে সংকোচ করছি। কিন্তু ভার্সিটিতে সারাদিন ওর সাথে বকবক করতাম আর এখন ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে না। তারপর আমি ওইখান থেকে চলে আসার সময় কাব্য আমায় পিছন দিয়ে ডাক দিলো।


--মিরা কোথায় যাচ্ছো??এখানে আসো ব্রেকফার্স্ট করবে। আজ আমি সব নিজের হাতে বানিয়েছি।


তখন আমি ঘুরে তাকালাম অবাক চোখে। যে কিনা এক গ্লাস পানিও নিজ হাতে খেতো না ভার্সিটিতে থাকতে সে কি না আজ রান্না করছে????

তখন কাব্য আবার বললো।


--অবাক হচ্ছো ঠিক না?? অবাক হওয়ার ই কথা।

কারন আগে আমি নিজ হাতে কিছুই করতাম না আর আজ রান্না করছি?? সব সময় শিখিয়ে দিয়েছে।

রাইসা চলে যাবার পর সব শিখিয়ে দিয়েছে আল্লাহতালা। আচ্ছা মিরা এদিকে এসো তাড়াতাড়ি।


তখন আমি ওর কথামতো চেয়ারে গিয়ে বসলাম। কাব্য আগের রাতের মত নাস্তাও নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে দিলো। আমি নাও করতে পারলাম না। কিন্তু কাব্যর বাসায় কেউ নেই। ওর মা-বাবা নেই। শুধু ২টি বোন আছে এক বোন বিবাহিত তার নাম ইরা আরেক বোন সুরভী। সুরভি ইরার বাসায় থেকেই পড়াশোনা করে। তাই বাসায় আমি আর কাব্য একা। তাই বেশী ভয় করে।


কাব্য আমাকে ভাত খাইয়ে দেয়ায় আমার একটা কথাই মনে পড়ছে। রায়হানের বাড়িতে বিয়ের প্রথমদিন আমি সব নাস্তা করেছিলাম। তাই খাওয়ানো শেষ হলে আমি থালাবাসন ধোয়ার জন্য নিলাম। রাত্রে কাব্য আমার শরীর না খুঁজলেও দিনে হয়তো আমাকে কাজের মেয়ে হিসেবেই চায়। (মনে মনে ভাবলাম)


কিন্তু না।

কাব্য আমার ভাবনা মিথ্যা করে দিলো। ও আমার হাত থেকে সব নিয়ে গেলো আর বললো।


--মিরা তুমি রেষ্ট নাও। আমি ই সব করবো।


কিন্তু আমি কোন কথাই বললাম না। যদি রায়হান থাকতো তাহলে হয়তো ঝগড়া টগড়া করতাম হয়তো।

তাই আমি চুপচাপ রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম। আর লকেট এ রায়হানের ছবি দেখতে লাগলাম। আমার খুব মন খারাপ থাকলে শুধু রায়হানের ছবি দেখি। ছবি টা দেখতেই আর চোখ ধরে রাখতে পারলাম না। 


যদিও রায়হানের শুধু মা আর বোন ছিলো হুমাইরা। রায়হান মারা যাবার পর ভেবেছিলাম সারাটি জীবন তাদের নিয়ে থাকবো কিন্তু তা আর হলো না। রায়হানের মা আমাকে শুধু খোটা দিতো আমি নাকি অপায়া আমি নাকি রায়হানকে খেয়েছি। কিন্তু আজব ব্যপার তিনিও বিধবা। তাও মুখ বুজে সব শুনতাম। কারন ওই বাড়ীতে রায়হানের একটা গন্ধ ছিলো। রায়হানের বোন হুমাইরা ডিভোর্সি ওর একটা ছেলে আছে নুহাশ। ও আমাকে খুব ভালোবাসে সারাদিন মামি মামি করতো। আর হুমাইরা আমার কাছে নুহাশকে দিয়ে সব কাজ করতো। রায়হান মারা যাবার পর নুহাশকে আমার কাছেও আসতে দিতো না। বলতো আমি নাকি রায়হানের মত নুহাশকেও খাবো। তাও মুখ বুজে থাকতাম। কিন্তু একদিন বাবাকে ডেকে আমাকে দিয়েই দিলো। খুব পা ধরেছিলাম রায়হানের মায়ের যে কাজের মেয়ের মত থাকবো আমি তাও থাকতে দিন। কিন্তু কিছুই শুনলো না আমাকে চলে যেতে বললো। এইসব কথা ভেবেই চোখ আর ধরে রাখতে পারি না। কান্না করতে লাগলাম।তখন কাব্য এসে দরজা ধাক্কা দিলো। আমি জলদি লকেট লুকিয়ে, চোখ মুছে দরজা খুললাম। তারপর কাব্য আমাকে বললো।


--মিরা তুমি কান্না করলে তোমাকে টমেটোর মত লাগে।আর টমেটো আমার ভালো লাগে না। চলো কোথায় ঘুরতে যাবে?


---না কাব্য।


--আচ্ছা তাহলে বাদ। আমি বাসায় আছি। তুমি রেস্ট নাও।


আমি বুঝতে পারছি কাব্য আমাকে ডিপ্রেশন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। অবশ্য সবসময় চেষ্টা করতো। আমার সাথে কথা বলতো। কিন্তু আমি বলতাম না। আমি আমার মতই থাকতাম। এইভাবেই ১মাস কেটে গেলো। কাব্য বাসায় থেকেই কি জানি কাজ করে আমি কখনো জিজ্ঞেস করি নি। আমাকে সময় কাটানোর জন্য কাব্য বই কিনে দিয়েছে। আমি তাই পড়তাম। পড়তে পড়তে হাসির গল্প হলেও কেদে দিতাম। কাব্য টস্যু নিয়ে এসে আমার চোখ মুছে দিতো। এই একমাসে এমন কোন দিন ছিলো না কাব্য আমাকে খাইয়ে দেয় নি। আর আমি রায়হানকে যে মনে করি নি।


কাব্য রাত্রে বসে বসে ডায়রি লিখতো স্বামীর অধিকার আজো চাই নি সে। কে জানে কবে চেয়ে বসে।

তো একদিন কাব্য ওর ফোন রেখে বাথরুমে গেলো।হঠাৎ তখন ফোন বাজছিল অনেকক্ষণ ধরে তাই কাছে গিয়ে দেখলাম। তাকিয়ে দেখলাম কাব্যর ১ম স্ত্রী রিয়া ফোন দিয়েছে। আমি একটু অবাক হয়েছিলাম ও কেন ফোন দিলো??


তারপর কাব্য এসে ফোন ধরলো। আমি আর জিজ্ঞেস করি নি। কেন ফোন দিয়েছে। কিন্তু কাব্য কথা বলা শেষ করলো। এবং ও নিজেই বললো।


--মিরা।

রিয়া ফোন দিয়েছিলো। ওর কিছু টাকা লাগবে কি দরকার। আমি পাঠিয়ে দিবো বলেছি। এজন্য না যে আমার প্রাক্তন স্ত্রী বরং এর জন্য যে ও আমার মেয়ের মা ছিলো একসময়ে।


এটা বলেই ও চলে গেলো। আমার ওর কথা শুনার পর কেন জানি মন মোচড় দিয়ে উঠলো। এক নতুন অনুভতি জাগ্রত হলো মনে। বন্ধুত্ব ভালোবাসার আরেক নাম। শুধু কেউ কষ্টের সময় ভালোবেসে হাত ধরলে সব কষ্ট ধুয়েমুছে যায়।

.

.

চলবে................